বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন

রাণীশংকৈলে ‘ডিজিটাল’ ঢেঁকিতে ধান ভাঙা

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:: গ্রামবাংলা থেকে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে হচ্ছে ঢেঁকি। তবে ঢেঁকির এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের ভরনিয়া গ্রামের ওমর ফারুক নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি ডিজিটাল ঢেঁকি।

শনিবর দুপুরে দেখা গেছে, উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ডেহোট বিন্নাকুড়ি গ্রামে আবুল হোসেনের ছেলে ওমর ফারুক বিলুপ্তপ্রায় প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নতুন রূপে ও আধুনিক পদ্ধতিতে ঢেঁকি ব্যবহার করে চাল প্রস্তুত করছেন। তিনি ঢেঁকিতে যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ধান ভেঙে চাল তৈরি করে রংপুরে বাজারজাত করছেন। নিজ উদ্যোগে, নিজ অর্থায়নে, নিজ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে মোটর বসিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে প্রত্যন্ত এ অঞ্চলে বিলুপ্তপ্রায় ঢেঁকিকে আধুনিকায়ন করে আলোচনার ঝড় তুলেছেন ওমর ফারুক। এই ঢেঁকি বিদ্যুৎচালিত মোটর দিয়ে চলে। এটিতে ব্যবহার করা হয়েছে লোহার হাতল। হাতল দিয়ে পালাক্রমে চাপ দিয়ে ধানের তুষ ছাড়িয়ে চাল বের করা হচ্ছে স্বল্প সময়ে। এতে সময় ও শ্রম দুটোই খরচ হচ্ছে কম। কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে মধ্যযুগীয় পদ্ধতিতে বড় পাতিলে খড়ির মাধ্যমে জ্বাল দিয়ে ধান সিদ্ধ করা হয় এখানে। আবার সেই ধান শুকিয়ে ঢেঁকির মাধ্যমে ভেঙে প্রস্তুত করা হচ্ছে চাল। এই চালের ফাইবার নষ্ট না হওয়ায় ও পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ার কারণে ওমর ফারুকের ডিজিটাল ঢেঁকির চালের চাহিদা বেড়েছে ব্যাপক হারে। সহজেই এই ঢেঁকির মাধ্যমে দিনে পাঁচ থেকে ছয় মণ ধান ভাঙতে পারেন বলে শ্রমিক ও মেশিন অপারেটর মানিরুল ইসলাম জানান।

স্থানীয় মেম্বার কাবুল হোসেন এবং ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক জানান, বর্তমানে বাজারে যে চাল পাওয়া যায়, তাতে অনেক কেমিক্যাল যুক্ত থাকে। তাই অসুখ বেশি হচ্ছে। কিন্তু ঢেঁকি দিয়ে তৈরি চাল খেলে অসুখ থেকে বাঁচব। তাই এ চালের চাহিদা বাড়বে। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, ঢেঁকি দিয়ে ভাঙা চালের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়তে থাকায় এখন শহরে ক্রমশ তার কদর বাডছে। অথচ যোগান তেমন নেই। বর্তমানে স্বল্প পরিসরে হলেও ওমর ফারুকের ডিজিটাল ঢেঁকিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকে। প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা পেলে অনেক বেশি গ্রামীণ জনগণের কর্মসংস্থান করতে পারবেন বলে জানান ওমর ফারুক মাসুদ ও তার বাবা আবুল মাস্টার।

ওমর ফারুকের বাবা আবুল হোসেন মাস্টার বলেন, এটি করাতে এলাকায় বেশ আলোচনা হচ্ছে। আমরা রংপুরেও এ চাল বিক্রি করছি। তবে ব্যাপক আকারে এটিকে আরো বড় করার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাশা করছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন, এরই মধ্যে ঢেঁকির বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার ব্যাপারে আমার সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com